আধুনিক হাতির প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস বর্ণনা কর।




 হাতির পূর্বপুরুষ নিয়ে অনেক বিতর্কের ঝড় বয়ে গেছে। বিভিন্ন বিবর্তনবিদ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেন। Lull মনে করেন যে, Moeritherium ফসিল হাতিকুলের প্রাথমিক অবস্থা যা কালে ভদ্রে আজকের হাতি উদ্ভবের পথ সূচনা করে। কিন্তু Scott ধারণা করেন যে, Palaeomastodon হাতির প্রথম নিদর্শন যা হতে পরবর্তী যুগে যাবতীয় হাতির আবির্ভাব ঘটেছে।

Moeritherium: আপার ইয়োসিন ও আর্লি অলিগোসিন যুগের পলিস্তর হতে মিশরে এটি আবিষ্কৃত হয়। এতে হাতির অনেক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল। এর উচ্চতা ছিল প্রায় ৩ ফুট, মাথার খুলি ছিল লম্বাটে এবং চক্ষু দুটি খুলির সম্মুখে অবস্থিত ছিল। এটির কোনো গুঁড় ছিল না। এতে স্বাভাবিক দাঁতের সংখ্যার ঘাটতি ছিল।

Palaeomastodon: মিশরের অলিগোসিন স্তর হতে এর জীবাশ্ম রেকর্ড করা হয়। Moeritherium হতে এর আকার ছিল বড়। সম্ভবত এর গুঁড় ছিল বিস্তৃত এবং গঠনগত দিক দিয়ে কিছুটা উন্নত হয়েছিল।


হাতির প্রত্নাত্ত্বিক অগ্রগমন:




(i) Phiomia: মিশরের নিম্নতর ওলিগোসিন শিলাস্তর হতে এ গণের ফসিলটি আবিস্কৃত হয়েছে। Lull মনে করেন Moeritherium হতে এর উৎপত্তি। স্কট এর মতে, Phiomia ওলিগোসিনের শেষ দিকে Palaeomastodon -এর একটি পার্শ্ব লাইন হতে আলাদা হয় ও বিচ্যুতি ঘটতে থাকে। পূর্ববর্তী দশাগুলোর চেয়ে এরা আকারে বড় ছিল। (ii) Trilophodon: ওলিগোসিনের শেষ দিকে ও পুরো মায়োসিন যুগে এ গণটির প্রাচুর্য ছিল। Palaeomastodon-ই এর


পূর্বপুরুষ বলে ধরা হয়। অত্যধিক অভিপ্রয়াণজনিত কারণে মায়োসিন যুগে এরা এশিয়া হতে উত্তর আমেরিকায় গমন করে এবং

স্বল্পকালের জন্য সেখানকার প্রাণী হিসেবে আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয়।


(iii) Tetralophodon: এরা প্লিওসিন যুগের প্রাণী। এ প্রাণীটির ঊর্ধ্ব ও নিম্ন চোয়াল সংক্ষিপ্ত ছিল। উপরের লম্বা গজদান্তর চেয়ে নিচের গজদন্ত ছোট ছিল। ফলে সংক্ষিপ্ত মুখমণ্ডলের উপরের মাংসল নাক প্রলম্বিত হয়ে আধুনিক হাতির ন্যায় লম্বা প্রোবোসিস বা গুঁড় গঠন করে।

(iv) Mastodon: এরা Palaeomastodon হতে উদ্ভূত হয়ে মায়োসিন সময়ে একটি গোষ্ঠী রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে Mastodon-এর কোনো নমুনা আর বেঁচে নেই।


(v) Stegodon-অন্তর্বর্তী হাতি প্লায়োসিন যুগে Mastodon-কে অপসারিত করে Stegodon পরিপূর্ণ বিকাশ লাভ করে। Stegodon-কে হাতি বিবর্তনের সফল লাইন রূপে গণ্য করা হয়, যা হতে আধুনিক হাতির আবির্ভাব ঘটেছে। আধুনিক' হাতি হতে এদের পার্থক্য শুধু করোটি বৃহৎ ও দন্তসমূহ অদ্ভুত ধরনের। বৈশিষ্ট্যের মধ্যে মুখমণ্ডল ছিল খাট, শুঁড় ছিল লম্বা প্রায় আধুনিক হস্তীবৎ এবং মোলার ছিল উচ্চ ক্রাউনযুক্ত সিমেন্ট সমৃদ্ধ।

(vi) Mammoth: Stegodon ও Stegomastodon হতে শেষ প্লিওসিন ও আদি প্লিস্টোসিন সময়ে এশিয়া ও ইউরোপে প্রথম আদর্শ হাতির উদ্ভব ঘটে। এ হাতিগুলো Mammoth নামে পরিচিত ছিল।

(vii) জীবিত হাতিকুল: Stegodon উৎস হতে উদ্ভূত দুটি গোষ্ঠী পৃথিবীর দুটি বিস্তীর্ণ এলাকায় বাস করে। এদের একটি হলো

ভারতীয় বা এশিয়াটিক হাতি, Elephas maximus ও আফ্রিকান হাতি Loxodonta atricana elephas-এর মোলার চওড়া ও উচ্চ ক্রাউনযুক্ত। পক্ষান্তরে, Loxodonta-র মোলার তুলনামূলকভাবে সরু ও নিচু ক্রাউনযুক্ত। ইয়োসিন হতে আধুনিক সময় পর্যন্ত হাতির বিবর্তন ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে ব্যাপক বিস্তৃতি ও বিশাল অভিপ্রয়াণ

ক্ষমতার কারণে এরা অনেক দূরত্ব অতিক্রম করে বরফাবৃত সাইবেরিয়া, এশিয়া ও আফ্রিকার নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে পৌঁছে

Leave a Comment